আজঃ মঙ্গলবার ১৩-০৫-২০২৫ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির নামে আওয়ামী লীগের প্রতারণা

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫
  • / পঠিত : ৬ বার

শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির নামে আওয়ামী লীগের প্রতারণা

এসবিনিউজবিডি ডেস্ক: মাদরাসা শিক্ষার কওমি ও আলিয়ার উভয় ভাগেরই সনদের স্বীকৃতি বা সমমান নিয়ে শুরু থেকেই প্রতারণা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। আলেমদের বশে রাখতে কিংবা রাজপথের আন্দোলন দমিয়ে রাখার কৌশল হিসেবে বিভিন্ন সময়ে এই প্রতরণার আশ্রয় নিয়েছিল সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রধান থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ের লোকজনও শীর্ষ ওলামায়ে কেরামদের সাথে প্রতারণা করেছেন নির্লজ্জভাবে। ধোকায় পড়ে কিংবা সরকারের চতুরতা বুঝতে না পেরে কওমি মাদারাসার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দিয়েছেন বারবার। অবশ্য এর জন্য সরকারকে শেষ পর্যন্ত মূল্যও দিতে হয়েছে চরমভাবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকার নানা সময়ে কওমির সনদের স্বীকৃতি দিয়ে বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছেন। একইসাথে আলিম মাদরাসাগুলোতে ফাজিলকে স্নাতক ও কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। সূত্র মতে, ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে ‘কওমি মাদরাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিলও পাস হয়। ওই একই বছর ১৩ আগস্ট এই আইনের খসড়ার অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ১০ সেপ্টেম্বর প্রথমবার তা সংসদে তোলা হয়। যদিও বর্তমানে এই সনদের স্বীকৃতি লাভ করে শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনে কার কতটুকু লাভ হয়েছে সেই হিসাব এখনো মিলাতে পারছে না কেউই।

তবে এ কথা সত্য যে সময়ের ওই সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী গঠিত কর্তৃপক্ষ বা আল হাইয়াতুল উলইয়ার অধীনে পরীক্ষা দিয়ে প্রতি বছর বছর ৩০ হাজারের বেশি আলেম দেশ ও মুসলিম উম্মাহর দ্বীনি খেদমতের প্রেরণা ও অঙ্গীকার নিয়ে বের হচ্ছেন। কিন্তু বর্তমানে এই আলেমদের কর্মসংস্থানের অভাব নিয়ে আলোচনা কিংবা সমালোচনাও হচ্ছে। স্বয়ং কওমি মাদরাসার মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে এই নবীন আলেমদের কর্মক্ষেত্র নিয়ে। বলা হচ্ছে, প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নতুন আলেমের জন্য কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে না। এটা যতই দিন যাচ্ছে, ততই তা বাস্তবদৃশ্য হয়ে উঠছে। ফলে সনদের স্বীকৃতি যে শুধু আওয়ামী লীগের শুধু কথার ফুলঝুড়ি আর মিথ্যা আশ্বাসই ছিল তা আজ আলেমদের সবাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।

মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী আমলে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কওমি পড়–য়াদের সনদের রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি ছিল না। ফলে রাষ্ট্র পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো কওমি পড়–য়াদের কর্মক্ষেত্র হওয়ার সুযোগ ছিল না। যদিও আমজনতার কাছে কওমি আলেমদের মূল্যায়ন সবসময়ই ছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রাষ্ট্র পরিচালিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও কওমি আলেমদের প্রবেশাধিকার ছিল না বললেই চলে।

রাজধানী ঢাকার মিরপুরের মাদরাসা দারুর রাশাদের শিক্ষা পরিচালক মাওলানা লিয়াকত আলী সম্প্রতি তার একটি গবেষণা প্রবন্ধে সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে তিনি মূল্যবান মতামত তুলে ধরেছেন। বিশিষ্ট ইসলামিক এই স্কলার মনে করেন আল হাইয়াতুল উলইয়া কর্তৃপক্ষ কওমি সনদের বর্তমান স্বীকৃতির প্রয়োগক্ষেত্র সম্প্রসারণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে আলোচনা ও যোগাযোগ করা জরুরি। যেমন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুল ও আলিয়া মাদরাসার শিক্ষকতায় কওমি সনদের গ্রহণযোগ্যতা থাকলে এসব পদে কওমি পড়–য়ারা প্রতিযোগিতা করতে পারবেন। এতে কওমি মাদরাসা পড়–য়াদের বিচরণক্ষেত্র বিস্তৃত হওয়ার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা চর্চায় নিয়োজিত ও নিবেদিত দুইটি পক্ষের সম্মিলন ঘটবে। ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে এই সংহতি প্রয়োজন ও ফলপ্রসূ হবে বলেও মনে করেন তিনি। একই সাথে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কওমি পড়–য়াদের অন্তর্ভুক্তির সুযোগ বৃদ্ধি ও স্বীকৃতির ব্যবস্থা করা সমানভাবে প্রয়োজন।

বিভিন্ন মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালক এবং শিক্ষক ও ওলামায়ে কেরামদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারাও সবাই শুধু মুখে মুখে সনদের স্বীকৃতি চান না। কার্যকর অর্থে এবং প্রায়োগিক ক্ষেত্রেও যেন আলিম ও কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দিয়ে কর্মজীবনে বা চাকরি পাওয়ার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয় সেই বিষয়টির নিশ্চয়তা প্রত্যাশা করেন। তাদের মতে জাতীয় সংসদে বিল পাস করার মাধ্যমে কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তবে এই স্বীকৃতি যেমন ব্যতিক্রমী, তেমনি এটির কার্যকারিতা এখনো সীমিত পর্যায়ে। পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি ও সবপর্যায়ে এই স্বীকৃতির কার্যকারিতা ও প্রায়োগিকতার জন্য বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম করা এখনো বাকি। প্রথমত. দাওরায়ে হাদিসের আগের স্তরগুলোর ধারাবাহিক স্বীকৃতি না থাকলে শুধু দাওরায়ে হাদিসের সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই প্রাথমিক, নি¤œ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের সনদও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির আওতায় আনা প্রয়োজন। আর তা করতে হলে এসব স্তরের পাঠদান ও কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগুলোর তদারকি নিয়মতান্ত্রিক করার বিকল্প নেই। তার আগে দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতি ও দরসে নেজামির স্বকীয়তা অক্ষুণœ রেখে দেশীয় ও সমকালীন প্রয়োজনীয় বিষয়াদির সমন্বয়ে নতুন পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা প্রয়োজন। নইলে কওমি পড়–য়ারা রাষ্ট্র ও সমাজের আর্থ-সামাজিক ক্রিয়াকলাপ ও বৈষয়িক পেশাগত জীবনধারায় আত্মনিয়োগ করতে পারবেন না। আর এই দায়িত্বটি পালন করতে পারবে আল হাইয়াতুল উলয়া। কওমি মাদরাসাগুলোর নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত ছয়টি বোর্ড সম্মিলিতভাবে আলহাইয়াতুল উলয়ার প্রণীত নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নে উদ্যোগী হলে তা অনেক সহজ হবে।

এ বিষয়ে দেশের বৃহত্তর কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) মহাপরিচালক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী জানান, কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা ও সনদ দেশের ছয়টি বোর্ডের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পরিষদ আল হাইয়াতুল উলইয়ার হাতে। এ সনদের স্বীকৃতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে ছয়টি বোর্ডের দায়িত্বশীলগণই ভাববেন। বৃহত্তর বোর্ড হিসেবে বেফাকের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও স্বকীয়তা বজায় রেখে সিলেবাসে নতুনত্ব আনা কিংবা বিভিন্ন স্তরের সনদের স্বীকৃতি অর্জন ইত্যাদি বিষয়ে যেকোনো ভাবনা সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণে বোর্ডের নীতিনির্ধারণী কমিটিগুলোর ওপর নির্ভরশীল। কওমি ইতিহাস ঐতিহ্য বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে বর্তমান সমাজ বাস্তবতা তরুণ প্রজন্মের চিন্তাচেনতা এবং যুগের চাহিদা বিশ্লেষণ করে বেফাকের মুরুব্বিরা যা ভালো মনে করেন বেফাক সে পথেই অগ্রসর হবেন।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba